পুরুষ বিদ্রোহী ছিল এ্যামাজন নারী যোদ্ধারা

পুরুষ বিদ্রোহী ছিল এ্যামাজন নারী যোদ্ধারা




গ্রিক পুরাণে  এ্যামাজন নারী যোদ্ধাদের কথা উল্লেখ আছে। যুদ্ধে তারা এতটাই দক্ষ ছিল যে, বিরতিহীন ভাবে তারা যুদ্ধ করতে পারত। আর এই বিরতিহীন যুদ্ধকে গ্রীক ভাষায় বলা হত এ্যামাজন যুদ্ধ। তারাই সর্ব প্রথম ঘোড়াকে বশ মানিয়েছিল।

ঐতিহাসিক হিরোডোটাসও এ্যামাজন নারী যোদ্ধাদের কথা বলে গিয়েছেন। হিরোডোটাস তাদের পুরুষ খুনি বলে আখ্যায়িত করেছেন। এ্যামাজন নারী যোদ্ধারা ছিল পুরুষ বিদ্রোহী।

গ্রীক পুরাণ মতে এ্যামাজন নারীদের সমাজ ছিল পুরুষশূন্য। তাদের সমাজ ছিল মাতৃতান্ত্রিক। তারা ছিল অনেক পরিশ্রমী। এ্যামাজন নারীদের সমাজ শাসিত হত রানীর মাধ্যমে।

গ্রীকদের ভাষ্যমতে এ্যামাজন নারী যোদ্ধাদের রাজ্যের অবস্থান ছিল কৃষ্ণসাগরের তীরে। বিখ্যাত নারীশাসক হিপ্পোলিটা ছিলেন সেই এ্যামাজন নারী যোদ্ধাদের রানী। হিপ্পোলিটার বাবা ছিলেন যুদ্ধের দেবতা আরেস।

তীরধনুক ছিল তাদের প্রধান যুদ্ধাস্ত্র। এছাড়া যুদ্ধে তারা কুঠার বর্শাও ব্যবহার করত। খুব ছোট বয়স থেকেই এ্যামাজন মেয়েদের তীরন্দাজ হিসেবে দক্ষতা অর্জন করতে হত। ধনুক বাঁকাতে বুকের ডান দিকে চাপ পড়ে, আর সেই জন্য এ্যামাজন মায়েরা তাদের মেয়েদের ডান স্তন পুড়িয়ে ফেলত। এই স্তন শূন্যতাকে গ্রীক ভাষায় বলা হয় এ্যামাজন। এই থেকেই এ্যামাজন শব্দটির উৎপত্তি।

এ্যামাজন নারীদের সমাজ পুরুষ শূন্য হওয়ায় বছরে একবার তারা পাশের রাজ্যে ঘুরতে যেত। সেখানে তারা যৌন মিলনে মিলিত হত। পুত্রসন্তান হলে তারা ফেলে আসত বা মেরে ফেলত।

শিল্পেও এ্যামাজন নারীরা পারদর্শী ছিল। ফুলদানী কিংবা দেয়ালচিত্রে তারা যুদ্ধের ছবি আঁকত।

এ্যামাজন নারীদের রানী হিপ্পোলিটার বাবা আরেস তাকে একটি যাদুর কোমরবন্ধনী উপহার দেয়েছিলেন। সেসময়ের এথেন্সের রাজা ছিলেন রাজা থেসিয়াস। আর সেই কোমরবন্ধনীর উপড় রাজা থেসিয়াসের লোভ জন্মেছিল। তখন থেসিয়াস গ্রীক মিথলজির স্বর্গীয় বীর হেরাক্লেসকে নিয়ে এ্যামাজনদের উদ্দ্যেশে সমরাভিযান শুরু করে। কৃষ্ণসাগরের পাড়ে থেসিয়াস তরী ভিরালেন। কিন্তু থেসিয়াস আক্রমণ করলেন না। তিনি এক অন্য পন্থা অবলম্বন করেন। থেসিয়াসের আসার খবর পেয়ে হিপ্পোলিটা সরল মনে উপঢৌকন নিয়ে থেসিয়াসের জাহাজে উপস্থিত হন। আর সে সময় থেসিয়াস পশ্চিমমুখী করে জাহাজ ভাসিয়ে দিলেন । তারপর জোর করে হিপ্পোলিটাকে বিয়ে করে ফেলেন। জাহাজ যখন এথেন্স নগরে ভিড়ল ততদিনে হিপ্পোলিটা গর্ভবতী। পরে হিপ্পোলিটা একটি পুত্রসন্তানের জন্ম দেন। আর পুত্রের নাম রাখা হয় হিপপোলিটাস। কিছুদিন পর থেসিয়াসের মোহভঙ্গ হয়। সে হিপ্পোলিটাকে এথেন্স থেকে বের করে দেয়। হিপ্পোলিটা মনে আঘাত পেয়ে এ্যামাজনদের রাজ্যে ফিরে আসে।

কিন্তু আধুনিক যুগের ঐতিহাসিকগণ এ্যামাজনদের নিয়ে ভিন্নমত প্রকাশ করেছেন। তারা এ্যামাজনদের সাইদিয় সভ্যতার শক নারীদের সঙ্গে তুলনা করেছেন। তাদের মতে শক নারীরাই হচ্ছে গ্রীকদের বর্ণীত এ্যামাজন নারী যোদ্ধা।

শক নারীরা ছিল যাযাবর। যুদ্ধ ও শিকারের কারণে শক পুরুষরা দীর্ঘসময় ধরে নারীদের থেকে দূরে থাকতে হত। আর এ কারনে শক নারীরা বছরের পর বছর ধরে পুরুষবিচ্ছিন হয়ে থাকতে হত। সে জন্য নিজেদের রক্ষার স্বার্থে শক নারীরা যুদ্ধ বিদ্যা গ্রহন করত।

খ্রিস্টপূর্ব ৮০০ শতকের দিকে শকরা এশিয়ার দিকে অগ্রসর হতে থাকে। যার ফলে গ্রীকরা তাদের প্রতি সচেতন হয় আর তাদের নামে মিথ্যা কল্পকাহিনী ছড়াতে থাকে। 

Post a Comment

Previous Post Next Post