আশি ও নব্বই দশকের সিনেমা |
একটা সময় ছিল যখন বাংলার মানুষ বাংলা
সিনেমা দেখার জন্য পাগল ছিল। নতুন সিনেমা মুক্তি পেলে হল্গুলোতে ভিড় লেগে যেত। একই
চিত্র ছিল টিভির পর্দাতেও। বিটিভিতে প্রতি শুক্রবার সিনেমা দেখানো হত। সেই শুক্রবার
কবে আসবে, কখন সিনেমা শুরু হবে তার জন্য মানুষ অধির আগ্রহে বসে থাকত।
আগে বাংলা সিনেমার মানও ছিল সেইরকম।
কত ভাল ভাল মুভি মুক্তি পেত তখন। ইদানিং হাতে গোনা কয়েক খানা সিনেমার নাম ছাড়া ভাল
সিনেমার নাম খুঁজাটাই মুসকিল হয়ে যাবে।
আশির দশক থেকে নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত
ছিল বাংলা সিনেমার স্বর্ণযুগ। অনেক ব্যবসাসফল সিনেমা তৈরি হয়েছিল সেসময়। আর সেসময়েই
মুক্তি পাওয়া কয়েকটি সিনামা সাড়া জাগিয়ে বাংলার মানুষের মনে ঠায় করে নিয়েছিল। সেইসব
সাড়াজাগানো সিনেমার কথাই আপনাদের কাছে তুলে ধরা হল।
ছুটির ঘন্টা
আজিজুর রহমান পরিচালিত ছুটির ঘন্টা
চলচিত্রটি মুক্তি পায় ১৯৮০ সালে। এতে অভিনয় করেছিলেন রাজ্জাক, শাবানা, এটিএম শামসুজ্জামান
সহ নামী কলাকুশলীরা। এই সিনেমাতে তুলে ধরা হয়েছে ঈদের ছুটিতে স্কুলের টয়লেটে আটকে পড়া
এক ১২ বছরের ছাত্রের করুণ মৃত্যুর কাহিনী। করুণ কাহিনীর সিনেমাটি সাড়া ফেলেছিল সারা
বাংলার মানুষের মনে।
বেদের মেয়ে জোসনা
বাংলা সিনেমার সর্বকালের সেরা ব্যবসাসফল
ছবি এটি। ১৯৮৯ সালে তোজাম্মেল হক বকুল এর পরিচালনায় মুক্তি পায় এই ছবিটি। বাংলার মানুষ
ছবিটিকে এতটাই গ্রহন করেছিল যে কোন কোন জায়গায় টানা কয়েক মাস ধরে হলে এই সিনেমাটি প্রদর্শিত
হয়েছিল। ইলিয়াস কাঞ্চন ও অঞ্জু ঘোষ অভিনিত এই সিনেমাটির সাফল্যের কারণে পশ্চিমবঙ্গেও
এর রিমেক হয়েছিল। ছবিটি মোট আয় করেছিল ২০ কোটি টাকারও বেশি। কারো কারো মতে এই ছবির
আয় ৪০ কোটি টাকা।
কেয়ামত থেকে কেয়ামত
হিন্দি চলচিত্র ‘কেয়ামত সে কেয়ামত
তক’ এর অফিসিয়াল রিমেক হিসেবে ১৯৯৩ সালে কেয়ামত থেকে কেয়ামত সিনেমাটি বাংলাদেশে মুক্তি
পায়। সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত এই ছবিটিতে অভিনয় করেছিলেন সালমান শাহ ও মৌসুমী।
মুক্তির পর পরেই বাংলাদেশে এই সিনেমাটি আলোড়ন সৃষ্টি করে।
স্বপ্নের ঠিকানা
বেদের মেয়ে জোসনার পর এটিই সবচেয়ে
ব্যবসাসফল চলচিত্র। ১৯৯৫ সালে মতিন রহমানের পরিচালনায় মুক্তি পায় স্বপ্নের ঠিকানা।
সালমান শাহ ও শাবনূর অভিনিত এই ছবিটি বাংলার মানুষ সেসময় সাদরে গ্রহন করেছিল। আর এই
সিনেমা পরেই বাংলার মানুষ সালমান শাহ-শাবনূর নামক এক হিট জুটির সন্ধান পায়। সিনেমাটি
মোট আয় করেছিল ১৯ কোটি টাকারও বেশি।
সত্যের মৃত্যু নেই
সালমান শাহ অভিনিত সত্যের মৃত্যু
নেই সিনেমাটি মুক্তি পায় ১৯৯৬ সালে। পরিচালনা করে ছটকু আহমেদ। সামাজিক ঘরনার এই সিনেমাটিও
তৎকালীন সময়ে বাংলার মানুষের মনে জায়গা করে নিতে সক্ষম হয়। এই ছবিটি আয় করেছিল ১১ কোটি
টাকারও বেশি।
ভন্ড
শহীদুল ইসলাম খোকন পরিচালিত ভন্ড
সিনেমাটি মুক্তি পায় ১৯৯৮ সালে। কমেডি একশন ঘরানার এই সিনেমাটিতে অভিনয় করেছেন রুবেল,
রাজীব, হুমায়ুন ফরিদি, খলিল, এটিএম শামসুজ্জামান সহ নামীদামী শিল্পীরা। যাদের অভিনয়
দক্ষতায় ও সিনেমার গল্পের মান সিনেমাটিকে নিয়ে গিয়েছিল এক অন্য উচ্চতায়। সিনেমাটি মুক্তির
পরেই ঘরে তুলে নেয় ৭ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে সিনেমাটি আয় করেছিল ১২ কোটি টাকা। সিনেমাটিতে
বড় থেকে ছোটদের মনেও জায়গা করে নিয়েছিল।
সূত্র:- উইকিপিডিয়া