আলবার্ট আইনস্টাইন, যিনি আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের ভিত্তি স্থাপন করে গেছেন, তার মস্তিষ্কের কাহিনী এক অদ্ভুত এবং রহস্যময় অধ্যায়। মহান এই বিজ্ঞানীর মৃত্যুর পর তার মস্তিষ্ক নিয়ে যে ঘটনা ঘটেছিল, তা সত্যিই বিস্ময়কর। চলুন দেখি আইনস্টাইনের মস্তিষ্ক নিয়ে এই অদ্ভুত ঘটনা এবং এর অন্তরালে লুকিয়ে থাকা কিছু তথ্য।
আইনস্টাইনের
মৃত্যু হয় ১৯৫৫ সালে। আইনস্টাইনের মৃত্যুর পরে, ডাক্তার থমাস হার্ভে, যিনি মহান বিজ্ঞানীর ময়নাতদন্ত করেছিলেন, নীরবে আইনস্টাইনের মস্তিষ্কের কিছু অংশ সংগ্রহ করেন।
ডাক্তার হার্ভে আইনস্টাইনের মস্তিষ্কের কিছু অংশ ছোট
ছোট করে কেটে নেন এবং সেটিকে
একাধিক পাত্রে সংরক্ষণ করেন পরবর্তী গবেষণার জন্য। কিন্তু তিনি
এটি করেছিলেন আইনস্টাইনের পরিবারের অনুমতি ছাড়াই। তিনি বিশ্বাস করতেন,
আইনস্টাইনের অসাধারণ মেধার পেছনে আইনস্টাইনের মস্তিষ্কের গঠন ও বৈশিষ্ট্যর
একটি গূঢ় রহস্য লুকিয়ে আছে।
ডাক্তার
হার্ভে আইনস্টাইনের মস্তিষ্ককে ২৪০ টি ভাগে বিভক্ত করেছিলেন।
এমনকি তিনি আইনস্টাইনের চোখও কেটে আলাদা করেছিলেন। সবগুলো অংশ মোট ১২ টি সেটে বিভক্ত
করে ২০০ টি স্লাইড তৈরি করে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
আইনস্টাইনের
মস্তিষ্কের বিভক্তির পর, কিছু অংশ পরে বিভিন্ন
গবেষকদের হাতে চলে যায় এবং তাদের দাবী ছিল, এই অঙ্গগুলোকে ব্যবহার করে আইনস্টাইনের মেধার গভীরতা বিশ্লেষণ করা সম্ভব।
কিন্তু এই মস্তিষ্কের বিভিন্ন
অংশের ভাগ্যের হাল পরবর্তীকালে অনিশ্চিত
হয়ে পড়ে।
এক দশক
পর, আইনস্টাইনের মস্তিষ্কের কিছু অংশ এপ্রিলের
শেষের দিকে হারিয়ে যায়। এই ঘটনার ফলে
এটি স্পষ্ট যে, বৈজ্ঞানিক গবেষণার
জন্য যে মস্তিষ্কের অংশগুলো
বাঁচিয়ে রাখা হয়েছিল, সেগুলোকে
সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা হয়নি। এটি আইনস্টাইনের মস্তিষ্কের গবেষণাকে একটি বিতর্কিত
এবং রহস্যময় পুরানির মত করে তোলে। বিষয়টি
জানাজানি হয়ে গেলে, মানুষের মধ্যে
এটি নিয়ে সন্দেহ ও উত্তেজনা তৈরি
হতে শুরু করে।
পুনরুদ্ধার ও তদন্তের অগ্রগতীর ফল ক্ষীণ থাকলেও, ২০০৫ সালের দিকে আইনস্টাইনের মস্তিষ্ক নিয়ে কিছু নতুন তথ্য প্রকাশ পায়। মস্তিষ্কের অংশগুলো কিভাবে ব্যবহৃত হয়েছিল এবং কোথায় চলে গিয়েছিল, তা নিয়ে নতুন তথ্য উন্মোচিত হয়। গবেষকরা আবিষ্কার করেন যে, কিছু অংশ আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে, যেমন সঠিক করে গঠন এবং বিশেষ স্নায়বিক সংযোগ। যদিও গবেষণার অগ্রগতি ধীরগতির ছিল, তবে এই নতুন তথ্যে আভাস পাওয়া যায় যে, মস্তিষ্কের গঠন সম্পর্কিত কিছু মস্তিষ্কের বৈশিষ্ট্য আসলেই আইনস্টাইনের মেধার সাথে সম্পর্কিত।
২০১০ সালের দিকে ডাক্তার হার্ভে-এর উত্তরাধিকারীরা আইনস্টাইনের মস্তিষ্কের বেশ কিছু অবশিষ্টাংশ ন্যাশনাল মিউজিয়াম অফ হেলথ অ্যান্ড মেডিসিনে স্থানান্তরিত করে। সম্প্রতি, ফিলাডেলফিয়ার মুটার মিউজিয়াম দ্বারা আইনস্টাইনের মস্তিষ্কের ৪৬ টি ছোট অংশ অধিগ্রহণ করা হয়েছে বলে তথ্য পাওয়া গিয়েছে। কিছু ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া গেলেও, মস্তিষ্কের পুরো অংশ এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি।
নব্বই দশকের
মাঝামাঝিতে এবং একবিংশ শতাব্দির শুরুর দিকে এসে, অনেক নামিদামি টিভি চ্যানেল আইনস্টাইনের
অদ্ভুত এই কাহিনী নিয়ে বেশ কয়েকটি ডকুমেন্টারি ফিল্ম সম্প্রচার করেছে। এমনকি অনেক বড়
বড় লেখকও তাদের বইতে এই বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।
শেষ
কথা, আইনস্টাইনের মস্তিষ্ক শুধুমাত্র বৈজ্ঞানিক গবেষণার ক্ষেত্রে নয়, বরং মানব
মনের গুণাবলী এবং মেধা নিয়ে গবেষণা করার জন্য গবেষকদের আগ্রহকে উদ্দীপিত করেছে। মহান এই বিজ্ঞানীর
মস্তিষ্ক হারিয়েছে, কিন্তু তার মেধা এবং
আবিষ্কার আমাদেরকে আজও প্রভাবিত করছে।
এগুলি আমাদের শেখায় যে, বিজ্ঞান শুধুমাত্র তথ্যের মালা নয় বরং মানব মনের গভীরতা,
সৃষ্টি এবং চিন্তার জগতকে অন্বেষণের একটি মাধ্যম।